গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে বাজিমাত রায়হানের, সম্ভাবনা দেখছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা

প্রকাশিত: ৯:৫৫ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৫

তিমির বনিক, মৌলভীবাজার :

 

সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজারে প্রথমবারের মতো গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করে সফল হয়েছেন শ্রীমঙ্গলের কৃষক রায়হান আহমেদ। মাত্র ৩০ গ্রাম বীজ ব্যবহার করে এক শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করেন তিনি। ফলন দেখে অভিভূত রায়হান এবং তার সফলতার গল্প এখন আশপাশের কৃষকদেরও আগ্রহী করে তুলেছে।

 

শুরুটা যেভাবে :

 

রায়হান জানান, গত বছর সেপ্টেম্বরে লালতীর সীড লিমিটেডের মাটকর্মীরা গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের বিষয়ে তাকে পরামর্শ দেন। তার বাড়ির পাশে পতিত জমি থাকায় তিনি সিদ্ধান্ত নেন পরীক্ষামূলকভাবে চাষের।

 

“তারা আমাকে হাইব্রিড বীজ ও চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে জানান। এরপর আমি জমি প্রস্তুত করে বীজ ছিটিয়ে দিই। কিছুদিন পর চারা গজাতে শুরু করে, পরে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করি। ফলন দেখে আমি অবাক! এখন প্রতি চার-পাঁচটি পেঁয়াজের ওজন এক কেজির কাছাকাছি হচ্ছে,” বলছিলেন রায়হান।

 

তিনি আরও জানান, দেশি পেঁয়াজের মতোই এর স্বাদ, এবং পরবর্তী মৌসুমে আরও বড় পরিসরে চাষের পরিকল্পনা রয়েছে তার।

 

বাণিজ্যিক সম্ভাবনা :

 

লালতীর সীড লিমিটেডের ডিভিশনাল ম্যানেজার তাপস চক্রবর্তী বলেন, “সিলেট বিভাগে আগে কখনো বাণিজ্যিকভাবে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ হয়নি। আমরা খলিলপুর গ্রামে একজন কৃষককে পরীক্ষামূলকভাবে এটি করতে উৎসাহিত করি। আমাদের তিনটি জাতের (এলটি হাইব্রিড, বিজিএস ৪০৩ ও রেড হিল) মধ্যে বিজিএস ৪০৩ সবচেয়ে ভালো ফলন দিয়েছে।”

 

তিনি মনে করেন, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানো গেলে দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি কমবে এবং আমদানি নির্ভরতা হ্রাস পাবে, যা জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

 

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ :

 

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আলাউদ্দিন জানান, সিলেট অঞ্চলে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করা কঠিন। তবে সরকারিভাবে এবং লালতীরের সহায়তায় কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।

 

“লালতীরের প্রদর্শনী মাঠে ভালো ফলন হয়েছে, যা কৃষকদের উৎসাহিত করবে। পেঁয়াজ চাষ অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভজনক এবং উৎপাদন খরচও কম,” বলেন তিনি।

 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা :

 

রায়হানের মতো আরও কৃষক যদি গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে এগিয়ে আসেন, তাহলে দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক পরিকল্পনা ও কৃষি সহায়তা থাকলে এ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ সম্ভব এবং তা দেশের বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।